বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর আয়োজনে ১০ জুন ২০২৪ তারিখে ওয়েসিস মিলনায়তন, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, ঢাকায় ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে বিসিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং ‘কারুশিল্প পুরস্কার ১৪৩০’ প্রদান অনুষ্ঠান সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মাননীয় শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব জাকিয়া সুলতানা, সিনিয়র সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক হিসেবে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, মুখ্য উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক তার মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, চেয়ারম্যান (গ্রেড-১), বিসিক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় শিল্পমন্ত্রী বলেন, “রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিসিক এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে।” বিসিকের উদ্যোগে দেশের কারুশিল্পের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জনাব জাকিয়া সুলতানা বিসিকের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বিসিকের উদ্যোগে দেশের কারুশিল্পীদের মধ্যে তাঁদের কাজের দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরুপ কারুশিল্প পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এই পুরস্কার কারুশিল্পীদের উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি আবহমান বাংলার সৃজনশীল কারুশিল্পের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার প্রয়াসকে ত্বরান্বিত করবে।
মূল প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, “শিল্পায়নে কর্মসংস্থান ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহতভাবে জরুরী। আনুমানিক ৪০/৪২ লাখ সিএমএস উদ্যোক্তাকে চিহ্নিত করে বিসিক এর অধীনে পর্যায়ক্রমে প্রকল্প মান, প্রকল্প তৈরী, বাজার সমীক্ষা, অর্থায়ন (সহজশর্তে) প্রচেষ্টা ও দেশে-বিদেশে বাজারজাতকরণ এবং মূল্যায়ন ও সমীক্ষা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যুক্তরাষ্ট্রের আদলে ইনকিউবেটর স্থাপন করা সমীচিন হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিসিক উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে শিল্পসমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে জনাব শ্যামল দত্ত, সম্পাদক, দৈনিক ভোরের কাগজ এবং জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান, সদস্য, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করেন। আলোচকগণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে বিসিকের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এর আরও উন্নতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিগণ, দেশী-বিদেশী বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিগণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত কমার্শিয়াল কাউন্সিলরগণ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
উন্মুক্ত আলোচনায়, উপস্থিত অতিথিরা বিসিকের কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। এরপর ‘কারুশিল্প পুরস্কার ১৪৩০’ প্রদান করা হয়, যা দেশের কারুশিল্পীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। ‘কারুশিল্প পুরস্কার-১৪৩০’ উপলক্ষে কারুশিল্পীদের কাজের দক্ষতা, গুনগতমান ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ ১ জন কারুশিল্পীকে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে কারুরত্ন এবং ৯ জন কারুশিল্পীকে দক্ষ কারুশিল্পী হিসেবে কারুগৌরব পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এবছর শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসেবে শোলা শিল্পের জন্য কারুরত্ন পুরস্কার পেয়েছেন ঝিনাইদহের গোপেন্দ্র নাথ চক্রবর্ত্তী। বিজয়ী প্রত্যেককে পুরস্কার হিসেবে সনদপত্র, ক্রেস্ট এবং শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী (কারুরত্ন) কে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকার ও দক্ষ কারুশিল্পীদের (কারুগৌরব) প্রত্যেককে ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকার চেক প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন এবং বিসিকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। অনুষ্ঠানস্থলে হস্ত ও কারুশিল্প পণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল যেখানে জামদানি, শতরঞ্জি, শীতলপাটি, পাটজাত, মণিপুরী শাড়ি, চামড়াজাত, খাদ্যজাত, বাঁশ-বেতজাত ইত্যাদি পণ্যের ১৫টি স্টলে বিসিকের উদ্যোক্তারা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যসমূহ প্রদর্শন করেন।
উক্ত আলোচনা সভা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান দেশের কারুশিল্প উন্নয়নে এবং শিল্পীদের মধ্যে উদ্ভাবনী চেতনা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত করবে বলে সকলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরিশেষে, নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।