আমি কৃষক বাবার সন্তান, আমার বাপ-দাদার আদি পেশা ছিলো কৃষি- এটা আমার আভিজাত্যের প্রচন্ড অহংকার।
আজকাল আমাদের দেশে শিক্ষিত লোকজন গ্রাম থেকে যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ছেলে মেয়েরাও লেখা পড়া শেষ করে কেউ আর গ্রামে ফিরতে চায় না। বাপ-দাদার ভিটা-মাটি ছেড়ে সবাই পাড়ি জমায় শহরে। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা একটু ভালো, তারা তো সুযোগ পেলেই উড়াল দেয় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা,
লন্ডন …….
অথচ একসময় আমাদের এইদেশের সম্পদ এবং সম্পত্তির দিকে লোলোপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো পর্তুগীজ, ডাচ, গৃক, ফ্রেঞ্চ,বৃটিশ, ইংরেজরাও। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজদ্দৌলার আমালেও পৃথিবীর সমস্ত জিডিপির ৩০ থেকে ৪০% আসতো বাংলার কৃষককূল থেকে। সুতরাং সত্যিকারের আভিজাত্য তো আমাদের পূর্ব পুরুষ তথা বাংলার কৃষকদেরই ছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ আপনি কি ভাবে গড়বেন? প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমার দেশের মাটি আছে, মানুষ আছে, তাই দিয়ে আমি দেশ গড়বো।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, ‘এক ইঞ্চি আবাদি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে।’ তাঁর কল্যাণে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। তিনি স্বপ্ন দেখেন, আমাদের উৎপাদিত পণ্য নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব বাজারে রপ্তানি হবে, উন্নত সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ। এবারের ঈদেও জননেত্রী শেখ হাসিনার মানবিক আহ্বান ছিলো, ঈদে বাড়ি গিয়ে নেতা কর্মীরা যেন কৃষকের পাশে দাড়াঁয়,ধান কেঁটে দেয়।
এরই ধারাবাহিকতায় জামালপুর সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক জিয়া দলবল নিয়ে নেমেছিলো আমার নিজের ইউনিয়ন ইটাইলের মান্নান মিয়ার ধান কেঁটে দিতে । বাড়িতেই ছিলাম, ভাবলাম, দর্শক হয়ে ওদেরকে একটু উৎসাহ দিয়ে আসি। জেলা স্বেছাসেবক লীগের সভাপতি তানভীর, সদর থানা আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক ভাই, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক খোকনভাইসহ এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে দেখাও হলো। একটু দূরেই, মান্নান সাহেবের বাড়ীর আঙ্গিনায় তার স্ত্রীসহ বাড়ীর মা-বোনরা দাঁড়ানো ছিলো, এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনারা কি ক্ষেতে যাবেন? সমস্বরে উত্তর এলো, “হ আমরাও ধান কাঁটবো”! বাহ! কে কাকে উৎসাহ দেয়! ওদের আগ্রহ-উচ্ছাসের ধাক্কায় আমিও ক্ষেতে নেমে পড়লাম । গ্রামের মা-বোনরা হাতে কাস্তে তুলে নিলো, মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমিও তা অনুকরণ করলাম। ওদের ধানকাঁটা দেখে আমি রীতিমতো অবাক, মুগ্ধ, অভিভূত! সুজনেরমা চাচীকে জিজ্ঞেস করলাম, এতো সুন্দর ধানকাঁটা কই শিখলেন? উত্তরে বললো, একসময় কত্তো ধান কাঁটছিরে, মা। জবাবটা মনে এবং কানে একই সাথে বাঁজলো।
তাইতো! একসময় নয়, সবসময়ই ঠিক এইভাবে যদি আমার কৃষক বাবার সাথে মা ধান কাঁটে, ছোট বোনটা আঁটি বেঁধে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যায়, কর্মজীবি ভাইটা কাজের ফাঁকে ধানগুলো মাড়াই করে দেয়, তাহলেই তো শ্রমিকের মজুরি নিয়ে কৃষকের পাহাড়সম ভাবনা অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে।
আমাদের সন্তানদেরকেও বলবো, শিকড়কে, নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যেও না। এইখানে, আমাদের এই অজ পাড়া গাঁয়, এই ঘর্মাক্ত কৃষকের ঘরেই তোমার পূর্বপুরুষের নাড়ী পোতা। তুমি যতো বড় বিজ্ঞানী, আমলা, অফিসারই হও না কেন, গ্রামকে ভালোবাসো, কৃষকের পাশে থাকো। কৃষক বাঁচলেই বাঁচবে দেশ,
সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।
শহরমূখী মানুষদেরকে বলবো-
“ওগো আমার শহুরে ভাই,
চলো সবাই,নিয়মিত গ্রামে যাই,
নিজের খাবার নিজেই ফলাই।
# কৃষকের প্রতিটি গোলাঘর ধন-ধান্যে ভরে উঠুক, ঘরের লক্ষীদের মায়া আর ছায়ায় বেঁচে থাকুক আমার কৃষক। সবার জন্য শুভকামনা।