টেকসইভাবে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এসডিজি অভিলক্ষ্য অর্জনের জন্য সার্কভুক্ত দেশসমূহের কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণবিদ, গবেষক, শিক্ষাবিদগণের অংশগ্রহণে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স আয়োজিত হয়েছে। ‘সোসাইটি ফর বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন নেটওয়ার্ক’ (বিএইএন) এবং ভারতের ‘পার্টিসিপেটরি রুরাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ সোসাইটি’র (পিআরডিআইএস) যৌথ আয়োজনে আজ (২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখ) থেকে ব্র্যাক সিডিএম অডিটরিয়ামে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপি এই কনফারেন্স।
কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএইএন-এর মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো: সেকেন্দার আলী; মূল বক্তব্য পেশ করেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালক-এর বিশেষ প্রতিনিধি ড. ড্যানিয়েল গুস্তাফসন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএইএন-এর সভাপতি ড. মো: হামিদুর রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন আফজাল হোসেন ভূঁইয়া; এফএও-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. রবার্ট ডি সিম্পসন এবং পিআরডিআইএস-এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার ড. ভি.ভি. সাদামাতে প্রমুখ।
এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, যুক্তরাষ্ট, যুক্তরাজ্য, ইতালীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩৫০ জন প্রতিনিধি কনফারেন্স-এ অংশগ্রহণ করেন। দেশগুলোর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরাও কনফারেন্সে অংশ নেন। কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সার্কভুক্ত দেশসমূহে টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা: সম্প্রসারণ কৌশল ও উপায়সমূহ পর্যালোচনা’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেন, “এই কনফারেন্সের যে চারটি মূল ভাবনার ওপর আলোচ্য বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং বাংলাদেশ ও সার্ক দেশসমূহের সম্প্রসারণ সেবা উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবার আগে কৃষকের দোড়গোড়ায় কিভাবে, কত দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্প্রসারণ সেবা পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “সম্প্রসারণ সেবাদনকারীদের মনে রাখতে হবে, সম্প্রসারণের জন্য এখন আর শুধু প্রযুক্তি নয়, কৃষকের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে সেবা প্রদান করতে হবে। ত্রিশ বছর আগেও এ দেশের জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ, যা এখন কমে যাচ্ছে এবং এটি আমাদের প্রত্যাশিত। এখন আর শুধু উৎপাদন নয়, এখন আমাদের দৃষ্টি দিতে হচ্ছে কৃষি শিল্পের দিকে, সেবা খাতের দিকেও। খাদ্য ও পুষ্টির বিষয় শিল্প ও সেবা খাতের সাথে রয়েছে নিবিড় যোগসূত্র।”
তিনি জানান, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা খাদ্য ঘাটতিতে ভুগেছি, অন্তত ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ দেশের মঙ্গা ছিল, দুর্ভিক্ষও দেখা দিত, অনেক কৃষক খুবই গরিব ছিল, তারা ছিল স্বাস্থ্যহীন। কিন্তু বর্তমান সরকার কৃষিক্ষেত্রে অব্যাহত সহায়তা ও দূরদর্শী পরিকল্পপনা গ্রহণের ফলে এখন দেশে খাদ্যের কোন অভাব নেই, কেউ এখন না খেয়ে মরে না। প্রধান খাদ্যশস্য ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ৩০ লক্ষ টন থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ টন শাকসবজি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। ভুট্টার বর্তমান উৎপাদন প্রায় ৬০ লক্ষ টন ও আলু প্রায় ১ কোটি টন।” কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি সম্প্রসারণ সেবাদানকারী সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে একসাথে মিলিতভাবে সমন্বিত সম্প্রসারণ সেবা দিতে ক্ষুদ্রতিক্ষুদ্র পরিসর থেকেই যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেন।