শিরোনাম

বিসিকের বৈশাখী মেলা-১৪৩২ এর শুভ উদ্বোধন

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে সাত দিনব্যাপীবৈশাখী মেলা১৪৩২‘-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সোমবার সকাল ১১.৩০ টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ০১-০৭ বৈশাখ ১৪৩২ (১৪-২০ এপ্রিল, ২০২৫) পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী ‘বৈশাখী মেলা-১৪৩২’ অনুষ্ঠিত হবে। মেলাটি প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বৈশাখী মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, পাহাড় থেকে সমতল, সারাদেশে আজ নববর্ষের আমেজ। বাংলাদেশের মানুষ আজ এক সাথে পালন করছে নববর্ষ। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলছে সারা দেশে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে ফ্যাসিবাদ উত্তর বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছি। আমরা এই উৎসব ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, খাদ্যজাতপণ্যের বিদেশে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। উদ্যোক্তারা এই মেলার মাধ্যমে এসকল পণ্যের বিদেশে রপ্তানি যোগ্য করে তুলবে। উদ্যোক্তারা যেভাবে ৫ই আগস্ট উত্তর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আরেকটি শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ। আমি আশা করি বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই মেলা উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

 

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেশের সব জাতিগোষ্ঠীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রদান করেন। তিনি বলেন অন্তবর্তী সরকার নববর্ষ পালনে সমতল ও পাহাড়ে বসবাসকারী সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করেছে এবার। তিনি আরও বলেন সবার সহযোগিতায় আমরা একটা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। এছাড়াও তিনি পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ট্রেনিং ও সহজ শর্তে ঋণের জন্য তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও বিসিকের প্রতি অনুরোধ করেন।

 

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এই ভূখন্ডের বাংলা ভাষার ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানিক ভাবে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার হলেও এই ভূখণ্ডের মানুষ প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাকে ধারণ করেছে। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি শাসকেরা বাঙালি সংস্কৃতিকে বিলোপের দ্বারা পাকিস্তানি সংস্কৃতি বিকাশে কাজ করছে যার ফলস্বরূপ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের অতীত ভালো ছিলো, ভবিষ্যতও দারুণ ভাবে গড়ার আশাবাদী। গণতান্ত্রিক উপায়ে আমাদের সব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে, এজন্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে হবে’।

 

স্বাগত বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান মো: সাইফুল ইসলাম সকলের সাথে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, পহেলা বৈশাখ দেশব্যাপী আনন্দের সাথে উদযাপিত হচ্ছে। এই মেলা নববর্ষের উৎসবকে বৈচিত্র্যময় করবে । মেলাতে ৯৮ টি স্টল রয়েছে যা পণ্য প্রদর্শন ও পণ্য বৈচিত্রে ভূমিকা রাখবে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান করবে।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক  অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম । এছাড়াও অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ মফিদুর রহমান, সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়; জনাব মোঃ ওবায়দুর রহমান, সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। মেলার উদ্বোধন শেষে অতিথিবৃন্দ মেলা ঘুরে দেখেন, উদ্যোক্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।

 

এবারের মেলায় কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, জিআই পণ্য যেমন জামদানি, শতরঞ্জি ও শীতলপাটি,  কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সকল প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রীর স্টল রয়েছে। এছাড়াও শিশু-কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ-সজ্জার সামগ্রী এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য স্টল রয়েছে । মেলায় মোট  ৯৮টি স্টল আছে। যার মধ্যে জামদানি শাড়ির ৫টি, নকশীকাঁথার ২টি, পাটজাত পণ্যের ৮টি, জুয়েলারি সামগ্রীর ৭টি, চামড়াজাত পণ্যের ৪টি, বাঁশজাত পণ্যের ২টি, মৃৎশিল্পের ১টি, বস্ত্রজাত পণ্যের ৩১টি, খাদ্যজাত পণ্যের ২০টি । প্রান্তিক কারুশিল্পিদের সুবিধার্থে বিনামূল্যে ১০টি স্টল বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলা একাডেমির জন্য ৮টি স্টল বরাদ্দ রয়েছে। মেলায় বিনোদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। মেলার নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভির পাশাপাশি সার্বক্ষণিক আনসার মোতায়েনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সরকারি খাতের মুখ্য পোষক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিসিক নতুন উদ্যোক্তা অন্বেষণ, উদ্যোক্তা সৃষ্টি, শিল্প নিবন্ধন প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান, ঋণ সহায়তা প্রদান, উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিসিক উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচার-প্রসার, বাজারজাতকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারা বছরব্যাপী পণ্য মেলা, প্রদর্শনী আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমি যৌথভাবে আশির দশক থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৈশাখী মেলা আয়োজন করে আসছে। নববর্ষকে উৎসবমুখর করে তোলে এই বৈশাখী মেলা। এটি মূলত সর্বজনীন লোকজ মেলা। এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন হয়ে থাকে।

আরও দেখুন

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ২৯৪তম সভা ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এর সভাপতিত্বে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *